Published on

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

Authors
  • avatar
    Name
    Md Al Mustanjid
Share on:

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি

হ্যাঁ, সত্যিই তাই। ৪ই আগষ্ট মধ্যরাতে লিখেতেছিলাম লেখাটা, খবর আসে যে রেইড চলতেছে আমার পার্শ্ববর্তী এলাকায়, বিজয়ের অপেক্ষায় পুরো জাতি। তখন নগদে কি করতে হবে সেটা আমাদের সবার জানা ছিলো। অদ্ভুতভাবে মাসটা আগষ্ট! বিধাতার যে কি ইচ্ছা ছিলো… হাসিনার পুত্র বলিয়াছেন যে, তারা আর এই দেশের জন্য নেই-গিরগিটির মত রূপের পরিবর্তন হতেই থাকবে, পুত্র জয়ের নানা শুরুতে থাকলেও পুরো শেখ পরিবার কোনদিন এ দেশের জন্য কাজ করেনি, কোনদিন করবেও না। আজকের জনগণ যেভাবে হাসিনাকে বিশেষ করে শেখ পরিবারকে চিনবে তার আগে কখনো চিনতে পারেনি বা চেনেনি, আর না হয় শুধু চিনেই গেছে, এবং আরো জানবে সামনের দিনগুলোতে। ঠিক একই কথা স্বামী ব্যতীত আর একটি পরিবারের ও তার অন্যতম সহযোগী দলের সবার জন্য। পলাতক, অপরাধী সব।

Js engine components
 বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা উদযাপনে এই গ্রাফিতি এঁকেছে আমার প্রিয় বোন স্নেহা

ক্ষোভ থেকে বিক্ষোভ, আর তা থেকে বিপ্লব। বিপ্লবী বিজয়ের পর হঠাৎ সারা দেশজুড়ে শোর/হট্টগোল, ভার্চুয়াল থেকে বাস্তবে প্রায় সবখানেই। আপনার দম যদি অনেকক্ষণ চেপে রাখা হয় তারপর ছাড়া হলে আপনি প্রথমে যে নি:শ্বাসটি নিবেন, অনেক জোরে এবং বড় আওয়াজ হবে সেটির। দেশটার বর্তমান অবস্থাও সেরকম। আপনি অদ্ভুতভাবে খেয়াল করঅবেন, আপনি যা মন চায় লিখতেছেন, বলতেছেন, করতে চাচ্ছেন। এই যে স্বাধীনতা, এই যে মুক্তবাক সেটাই তো স্বাধীন সত্তার প্রকাশ, অপরাধ সেখানে ভিন্ন বিষয়। একটি ফ্যাসিস্ট সরকার কখন হয়? যখন সে দীর্ঘকালীন সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে, সেই দীর্ঘ সূত্রিতায় আপনার আমার এ দেশের কিছু মানুষই কিন্তু তার সহযোগী ছিলো। তারা অপরাধী, তাদেরকে বিচার করতে হবে যেটা এদেশে ছিলো না, প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনি অনেক ক্ষোভ ঝেড়েছেন কিন্তু আপনি যদি তাদেরই একজন হয়ে যান তবে আপনার চেতনার ঝুলে থাকা বলে নাড়া দিতে হবে এবং সেটার প্রতিষ্ঠাই চলছে বলে আমি আশা করছি। যে আওয়ামীলীগের ছিলো তাকেও ছেড়ে দেন, বলতে দেন, অপরাধ করলে বিচারের ব্যবস্থা করেন। একইভাবে বিএনপি, জামায়াত মাথা চাড়া দিলে প্রতিবাদ করুন। বাড়ির পাশে অন্যায় হলে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলুন, মহল্লার সবাই অন্যায় ও অবিচারের প্রতি অসহনীয় ভূমিকা পালন করুন। এই আন্দোলনে যারা প্রাণ দিয়েছে তারা কিন্তু ঠিক এটার জন্যই তাদের জীবন দিয়েছে । এই সবগুলা কথা যে বললাম এটা তখনই সত্য হবে যখন আপনি আওয়াজ উঠাবেন যতই আপনার এলাকায় শয়তানের আধিক্য হোক এবং চেতনাওয়ালা মানুষের কমতি হোক । এই বিপ্লব নিয়ে ভালো-খারাপ বলবেই, কেউ প্রশ্ন ছুড়বে স্বাধীনতা নিয়ে, কেউ সাপোর্ট করতেই থাকবে, কেউ সমালোচনা করবে আরো ইত্যাদি। এই যে কতকিছু হচ্ছে এটাই তো আমরা চেয়েছিলাম। সবাই তার জায়গা থেকে বলবে, মতামত প্রকাশ করবে। সেখানে আপনার যদি বলার থাকে বলুন, কিন্তু আপনি যদি হাসিনার মতো অসহনীয় আচরণ করবেন তাহলে আর কি হলো! হ্যাঁ অবশ্যই সেখানে মার্জনীয়তা থাকতে হবে, যদি না থাকে সেটাকেও সুন্দরভাবেই সমাধান করতে হবে, গলা টিপে/আগুন দিয়ে হত্যা করে নয়।

ফ্যাসিবাদের পর দেশে হাজারো সমস্যা, দাবি, না পাওয়ার গ্লানি মাথা চাড়া দিয়ে উঠতেই থাকবে কারণ এতোদিন কেউ বলতে পারেনি। এর সাথে হাসিনা দেশ ছাড়লেও তারই হাত দিয়ে বানানো সন্ত্রাসী দল এ দেশেই রয়ে গেছে এবং সেটার সংখ্যা নগণ্য নয়, আর যে পরিমান অর্থ সে এদেশের মানুষের থেকে শুষে নিয়েছে, সেই টাকাই ব্যবহার করবে এদেশের মানুষের অশান্তির জন্য তারই শয়তানের দলকে দিয়ে। শুধু অর্থ নিলেও হতো, এ দেশের মানুষ হত্যা হচ্ছে তার চরম আনন্দের স্বাদ- শুধু এই বিষয়টুকু নিম্ন (below) স্তরে নিয়ে বাকি সবই সত্য আর এক মা ও ছেলের জন্য, আহারে! যার ফলাফল তো চোখের সামনেই। বিডিআর কেলেংকারি (আগস্টের প্রতিশোধ), হেফাজত ইসলাম গণহত্যা ,সাম্প্রদায়িক অত্যাচার, পাহাড়ে অসমতা, আয়নাঘর, আইন শৃঙ্খলা অবনতি থেকে আরো কত কি! সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ পুলিশকে ধংস করে দিয়ে গেছে। অথচ দেশের প্রথম বিষয় হচ্ছে আইন ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা। সেখানে সে এতো দুর্নীতি আর অনিয়ম করে গেছে যে দেশ এখনো শয়তানের কবল থেকে মুক্ত নয়, হয়তো সে দায়িত্ব আমাকে আপনাকেই নিতে হবে। এর সাথে সাম্প্রদায়িকতা, লুটপাট, হয়রানি এসব তো আছেই কারণ তার শয়তান দল এখনো বিদ্যমান। আবার দেখুন না এই বিষয় কতটা সংক্রামিত, শত শত মানুষের লাশ এর কান্না, হাজারো আহতের রক্ত শুকাইতে দিলো না, আর মিছিল সমাবেশের ছড়াছড়ি।

এদেশ ছাত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়েই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, সেখানে সাধারণ মানুষেরও অবদান অপরিসীম। এই অবদানের সঠিক প্রতিষ্ঠা, স্বীকারোক্তি এবং সম্মাননা যদি পরিপূর্ণভাবে গঠিত না হয় তখনই সব গোলমেলে হয়ে যায়। মৃত্যু সবার জন্যই নির্ধারিত, কিন্তু কিভাবে তা ঘটে যায় সেটা কিন্তু এক হয় না আমাদের সবার। যুদ্ধ পরবর্তী ইতিহাসের কিছু চরম সত্য এই আগস্ট মাস আমাদের জাতির কাছে অন্যভাবে নিয়ে এসেছিল বহু বছর আগে, তার জন্য কারণটা ছিলো ওই গোলমেলে হয়ে যাওয়া। আজকে আমাদের আন্দোলনের মূল হচ্ছে সঠিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা, শোষণ ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি, ৭১ এ যার জন্যই আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। আমরা যখন সাফল্য লাভ করি অনেক প্রাণ বিসর্জন ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে তখন আমরা সবাই তাকিয়ে থাকি এই সাফল্যের নের্তৃত্বর দিকে এবং আশায় বুক বাধি। আপনি যদি আমাকে বলেন আমরা কি তা পাইনি আজো? আমি ব্যক্তিগতভাবে বলব ‘না’। কিন্তু আমি মনে করি আজ আমরা সবাই সেদিকে আবারো তাকিয়ে আছি অপলক দৃষ্টিতে। এবং একই সাথে এই বিশ্বাসে যে গোলক ধাধা শেষ হবে।

জানি রাজনীতি এবং রাজনৈতিক ব্যাপার সহ আরো অনেক বিষয়াদি রয়েই যায়, আমি সেসব অতো বুঝি না আবার জানিও না। কিন্তু আজকে এই যে কোটা আন্দোলন থেকে আমরা ছাত্র আন্দোলনই (অনেকে বলছেন এবং বিশেষায়িত করছেন) বা জাতীয় আন্দোলনই বলি, একটা বিষয় আমরা কি করে ভুলি, সেটা হচ্ছে ছাত্র কি জাতির অংশ না? আমি এমনো অনেক শিক্ষার্থী, মানুষ দেখেছি যারা রাজনীতির ‘র’ তেও নাই ঠিক আমারই মতো এবং এখানে আধিপত্য সর্বসাধারণের। এখানে সফলতাটা কিন্তু আবারও সেই ঘুরে ফিরে ঠিক একইভাবে নির্ভর করছে নেতৃত্ব দানকারীদের উপর। এখন যারা আগেই এখানে বিষয়টিকে মনে করছেন অন্যকিছুর হাতিয়ার তা আপনারা নিশ্চিত হয়েছেন আপনাদের ব্যক্তিগত চিন্তা ও মাপকাঠিতে। মজার বিষয় হচ্ছে, ভবিষ্যতে আপনার এই মতামতকে যদি দমন করার চেষ্টা করা হয় তবে বুঝে নিবেন যে গোলক ধাধা শেষ হয়নি। সেই সাথে যে আশায় বুক বেধেছি তা অধরাই রয়ে গেছে বিশ্বাসঘাতকতায়।

অন্ধ মানুষ যখন চোখে দেখতে পায় তখন সে প্রথম তার হাতের লাঠিটা ফেলে দেয়।

স্বাধীনতার স্বাদ নিয়ে আমি ইতোমধ্যেই বিষয়টি এরকম ভাবেই অনুভব করছি। তবুও চাই এ স্বাদ চিরজীবী হোক, নয়ত আবারো কোন আবু সাঈদ, মুগ্ধ, রাফি, ফাইয়াজ সহ অসংখ্য প্রাণ আপনার আমার জন্য প্রস্তুত হবে, পরিবার ভুক্তভোগী হবে শুধুমাত্র ওই নেতৃত্ব দানকারীদের বিনাশ করার জন্য। আফসোস হচ্ছে আমি আপনি হয়তোবা সেটুকুও করতে পারলাম না! হয়ত আমার আপনার মৃত্যু সেখানে থেমে আছে, হয় দেখার না হয় দেবার জন্য ।

স্বাধীনতা সফল হোক…

Share on: